আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতীয় সংগীত জগতে শোকের ছায়া। প্রখ্যাত তবলা বাদক এবং সঙ্গীতশিল্পী জাকির হোসেন ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর, ৭৩ বছর বয়সে প্রয়াত। ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অগ্রগণ্য এই মহান শিল্পীর প্রয়াণ সঙ্গীতের একটি যুগের সমাপ্তি ঘটাল, যা শুধু ভারতীয় সঙ্গীত জগতেই নয়, বিশ্বের সকল শ্রোতার জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

১৯৫১ সালে মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণকারী জাকির হোসেন ছিলেন প্রখ্যাত তবলা বাদক উস্তাদ আল্লা রাখার পুত্র। সঙ্গীতের প্রতি তীব্র আগ্রহ এবং কঠোর প্রশিক্ষণ তাঁকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তবলাবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

সঙ্গীতের প্রতি অসীম ভালোবাসা, সৃজনশীলতা এবং সূক্ষ্মতা জাকির হোসেনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত করে তোলে। তিনি কেবল একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন না, বরং সাংস্কৃতিক দূত হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

জাকির হোসেনের সুর, তাল এবং বাদন নিয়ে তাঁর অসামান্য দক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতা তাকে পৃথিবীজুড়ে শ্রদ্ধার পাত্র করে তোলে। পশ্চিমী ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত, জ্যাজ এবং বিশ্ব সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তিনি অসংখ্য শিল্পীর সাথে সফলভাবে সহযোগিতা করেছেন, যার মধ্যে জর্জ হ্যারিসন, জন মাকলফলিন এবং রবি শঙ্করের মতো বিশিষ্ট শিল্পী রয়েছেন। তাঁর ‘শক্তি’ নামক যৌথ প্রজেক্ট সংগীতের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, যা আজও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

একজন শিক্ষক হিসেবে জাকির হোসেন নতুন প্রজন্মের সঙ্গীতশিল্পীদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত। তাঁর শিক্ষা এবং প্রদর্শনীগুলি ছিল অত্যন্ত প্রাণবন্ত, নির্ভুল এবং গভীর। জাকির হোসেন আন্তর্জাতিক সঙ্গীত উৎসবসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিল্পীদের একত্রিত করেছেন, যা সঙ্গীতের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছে।

জাকির হোসেন সঙ্গীতের জগতে তাঁর অসাধারণ অবদান রেখে গিয়েছেন, যার জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান, পদ্মভূষণ অন্তর্ভুক্ত।

তিনি তাঁর স্ত্রী, দুই সন্তান এবং অসংখ্য ছাত্র, অনুরাগী এবং শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন যারা তাঁর সঙ্গীত এবং শিক্ষা গভীরভাবে মূল্যায়ন করে। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় তথা বিশ্বের সঙ্গীতের জন্য এক অপূরণীয় শূন্যতা। তাঁর সঙ্গীত এবং তাঁর প্রভাব অমর হয়ে থাকবে অগণিত ভক্ত এবং শ্রোতার মধ্যে।