আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কিংবদন্তি তবলাবাদক জাকির হোসেন আর নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে দুই সপ্তাহ আইসিইউতে থাকার পর রোববার (১৫ ডিসেম্বর) হৃদরোগ ও ফুসফুসজনিত অসুস্থতায় প্রয়াত হলেন তিনি।
এর আগে সংগীতশিল্পীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছিল, ‘দুই সপ্তাহ আগে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে তাঁকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং চিকিৎসকরা খুব একটা আশাবাদী নন। ভারত থেকে তাঁর পুরো পরিবার তাঁর এই সময়ে থাকতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উড়ে গিয়েছেন।’
৭৩ বছর বয়সী এই সংগীতশিল্পী, কিংবদন্তি তবলা শিল্পী ওস্তাদ আল্লাহ রাখার পুত্র, বেশ কিছু সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন। যে কারণে তাঁর আসন্ন কয়েকটি কনসার্টও বাতিল করা হয়েছিল। হোসেনের অসুস্থতার খবরটি নিশ্চিত করেছিলেন অনেকেই। গ্র্যামিজয়ী বংশীবাদক তথা হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাকেশ চৌরাসিয়া সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছিলেন, ‘হোসেন অসুস্থ এবং আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।’
সাংবাদিক পারভেজ আলম এক্স-এ খবরটি শেয়ার করে প্রকাশ করেছিলেন যে, তবলা কিংবদন্তির শ্যালক আইয়ুব আউলিয়া একটি ফোন কলে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লন্ডনে বসবাসকারী আউলিয়া ভক্ত ও অনুরাগীদের অনুরোধ করেছেন, তারা যেন শিল্পীর জন্য প্রার্থনা করেন। শাহজালাল আলম টুইটারে লিখেছিলেন, ‘ওস্তাদ জাকির হোসেন, তবলা বাদক, পারকাশনিস্ট, সুরকার, সাবেক অভিনেতা ও কিংবদন্তি তবলা বাদক ওস্তাদ আল্লাহ রাখার ছেলে ভালো নেই। গুরুতর অসুস্থ হয়ে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর শ্যালক আইয়ুব আউলিয়া। আউলিয়া সাহেব জাকিরের অনুগামীদের তাঁর দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন। ‘
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে অসাধারণ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান ওস্তাদ জাকির হোসেন এ বছর ৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। সাতটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে মুম্বইয়ে ওস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খান পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বইয়ের মাহিমে তবলা বাদক, আল্লা রাখা এবং ববি বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করা জাকির হোসেন খুব অল্প বয়সেই তবলা বাজানোর প্রতি ঝোঁক পোষণ করেছিলেন। জাকির হোসেন মাত্র ৩ বছর বয়সে তাঁর বাবার কাছ থেকে মৃদং (একটি শাস্ত্রীয় তালবাদ্য বাদ্যযন্ত্র) বাজানো শিখেছিলেন এবং ১২ বছর বয়সে কনসার্টে পারফর্ম করতে শুরু করেন। অসাধারণ প্রতিভার কারণে পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী এবং সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।
জাকির হোসেনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া টুইট করেছেন, ‘জাকির হোসেনজি-র তবলার বোল সর্বজনীন। ভাষা, সীমানা, সংস্কৃতি এবং প্রজন্ম অতিক্রম করে কথা বলে। তাঁর ছন্দের শব্দ ও কম্পন চিরকাল আমাদের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হবে। সর্বদা প্রতিধ্বনিত হবে, বাহ তাজ! তাঁর পরিবার, ভক্ত এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। ওম শান্তি।’
Leave a Reply