আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সিরিয়ার বিদ্রোহীরা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাবা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের সমাধি পুড়িয়ে দিয়েছে। খবর বিবিসির
বিবিসি’র যাচাই করা ভিডিওতে দেখা গেছে, উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার পাহাড়ি লাতাকিয়া প্রদেশের কারদাহা অঞ্চলে অবস্থিত সমাধিটিতে আগুন জ্বলছে, আর সশস্ত্র যোদ্ধারা এর চারপাশে হেঁটে হেঁটে স্লোগান দিচ্ছেন।
সম্প্রতি ইসলামিক গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে তীব্র হামলা চালায় এবং আসাদ বংশের ৫৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়।
এরপর বাশার আল-আসাদ সপরিবারে রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং সেখানেই আশ্রয় নেন।
সাধারণ জনতা উল্লাস করে সারা সিরিয়া থেকে হাফেজ আল-আসাদ ও তার ছেলে বাশার আল-আসাদের সব ভাস্কর্য ও পোস্টার নামিয়ে ফেলেছে।
২০১১ সালে বাশার আল-আসাদ নৃশংসভাবে একটি শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রপন্থী অভ্যুত্থান দমন করেন। এর ফলে সিরিয়ায় একটি বিধ্বংসী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যাতে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত কঠোর হাতে সিরিয়া শাসন করেন, এরপর শাসনক্ষমতা তার ছেলে বাশারের হাতে আসে।
হাফেজ আল-আসাদ শিয়া মুসলমানদের একটি শাখা এবং সিরিয়ার একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু আলাওতি সম্প্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন। তাদের প্রধান নিবাস ভূমধ্যসাগরের উপকূলে এবং তুরস্কের সীমান্তবর্তী লাতাকিয়া প্রদেশে।
আলাওতিরা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০%। অনেক আলাওতি আসাদ পরিবারের দীর্ঘ শাসনকালে তাদের তাদের কট্টোর সমর্থক ছিলেন। এখন তারা কেউ কেউ বিজয়ী বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
তবে সোমবার এইচটিএস ও আরেক সুন্নি মুসলিম গোষ্ঠী ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র সদস্যদের নিয়ে গঠিত বিদ্রোহী প্রতিনিধিদল কারদাহা শহরে গিয়ে বাশার আল-আসাদের আলাওতি সম্প্রদায়ের প্রবীণ সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় আলাওতিরা বিদ্রোহীরা সমর্থন দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বিদ্রোহী প্রতিনিধি দল একটি নথিতে স্বাক্ষর করেছে, যাতে সিরিয়ার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর গত রোববার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেয় এইচটিএস ও তাদের মিত্র বিদ্রোহী দলগুলো। এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি এখন তার আসল নাম আহমেদ আল-শারা ব্যবহার শুরু করেছেন।
জোলেনি একজন প্রাক্তন জিহাদি, তিনি ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীলতার অঙ্গীকার করেছেন।
সিরিয়ায় জাতিসংঘের দূত বলেছেন, বিদ্রোহীদের অবশ্যই তাদের দেওয়া ‘ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি’গুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আল জাজিরা
Leave a Reply