মোঃ ফরিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী চর রাজিবপুর উপজেলা, যেখানে প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জের আরেক নাম। প্রান্তিক কৃষকরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন প্রকৃতি ও আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে। আর এই সংগ্রামী কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে আশার আলো ছড়াচ্ছেন এক ব্যক্তি—উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রতন মিয়া। তার মানবিকতা, পেশাদারিত্ব, এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব তাকে আজ এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মানবিকতা ও পেশাগত দক্ষতার সমন্বয়ঃ কৃষকদের চাহিদা ও সমস্যাকে সামনে রেখে কাজ করাই তার মূলমন্ত্র। যেখানেই কৃষকের ডাক, সেখানেই তার উপস্থিতি। কৃষকদের চাষাবাদের উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ, এবং সঠিক পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে তিনি তাদের জীবনে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন। শুধু অফিসে বসে ফাইল সামলানো তার কাজ নয়; মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সরেজমিনে কৃষকের সমস্যা শনাক্ত করা এবং তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া তার নিয়মিত কাজের অংশ।
কৃষকের চোখে রতন মিয়াঃ কোদালকাটি ইউনিয়নের তেরোরশি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক মন্জিল বলেন, “রতন স্যারের মতো কর্মকর্তা পেয়ে আমরা গর্বিত। তার সঠিক দিকনির্দেশনায় আমি নতুন জাতের সবজি চাষ শুরু করেছি, যা আমাদের চাষাবাদকে আরও লাভজনক করেছে।”
মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলামারীর আনিসুজ্জামান (আনিস) বলেন, “স্যার আমাদের মতো সাধারণ কৃষকদের জন্য যে আন্তরিকতা দেখান, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার সহযোগিতা ছাড়া আমরা আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারতাম না।”
রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের তরুণ কৃষক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “উন্নত প্রযুক্তি ও সঠিক নির্দেশনা পেতে রতন স্যারই আমাদের ভরসা। তার অনুপ্রেরণায় আমরা এখন চাষাবাদে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারছি।”
কোদালকাটি ইউনিয়নের কাদের মেম্বার পাড়ার ইজ্জত আলী বলেন,“রতন স্যার মাঠে এসে আমাদের সমস্যা নিজে দেখেন। তার নির্দেশনায় আমাদের উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। তার মতো কর্মকর্তারা আমাদের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।”
শিক্ষা ও কর্মজীবনের অনন্য যাত্রাঃ সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই কৃষি খাতের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ও দায়বদ্ধতার বীজ রোপিত হয়। উচ্চশিক্ষা শেষে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী এবং কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এই কর্মস্থলগুলোতে তার অসামান্য কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি প্রশংসিত হন।
চর রাজিবপুরে যোগদানের পর থেকে তিনি নিজ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে চলেছেন। তার নেতৃত্বে স্থানীয় কৃষি বিভাগ আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রতি কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে।
কৃষি উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকাঃ কৃষি খাতের যে কোনো সমস্যায় তার তাৎক্ষণিক সমাধানের সক্ষমতা স্থানীয় কৃষকদের মনে এক গভীর আস্থা তৈরি করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন জৈব সার, মালচিং পদ্ধতি, এবং উন্নত জাতের বীজের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
অফিস থেকে মাঠ—একই দক্ষতায় নেতৃত্বঃ অফিসে আসা প্রত্যেক কৃষকের প্রতি তিনি দেখান সুমিষ্ট ব্যবহার। সেবা পেতে যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয়, তা তিনি সবসময় নিশ্চিত করেন। সরকারি সেবা সঠিকভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সৎ এবং নিষ্ঠাবান।
উন্নয়নের প্রত্যাশাঃ মোঃ রতন মিয়ার কর্মকাণ্ড শুধু চর রাজিবপুর নয়, গোটা কুড়িগ্রাম জেলার কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব, এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা চালুর প্রচেষ্টায় চরাঞ্চলের কৃষকরা নতুন আশায় বুক বাঁধছেন।
স্থানীয় প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, এবং সমাজের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের একত্রিত প্রচেষ্টায় তার মতো কর্মকর্তার কাজ আরও বিস্তৃত হতে পারে। তার নেতৃত্বে চর রাজিবপুরের কৃষি খাত একদিন জাতীয় পর্যায়ে উদাহরণ হয়ে উঠবে—এমনটাই প্রত্যাশা।
Leave a Reply