নিজস্ব প্রতিবেদক:
ছোটবেলায় মাঠে খেলার সময় মাথার উপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে গেলেই সেটির প্রতি আগ্রহ জাগতো শামীম রানার। ভাবতেন, বড় হয়ে একদিন নিজেই বানাবেন এমন উড়োজাহাজ।
সেই ভাবনা থেকেই ইউটিউব দেখে আর নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে সত্যিই একটি উড়োজাহাজ বানিয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়া হাবিবরপুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণির স্কুলছাত্র শামীম রানা। ওই গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলামের ছেলে সে। পড়াশোনা করছেন উপজেলার স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ফুলবাড়ী জছিমিয়া সরকারি মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।
শামীম রানা জানান, ছোটবেলা থেকেই উড়োজাহাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিলো তার। আকাশে কোন উড়োজাহাজ উড়ে যেতে দেখলেই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেন সেদিকে। ভাবতেন, কিভাবে এতো যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়ায় উড়োজাহাজ।
তখন থেকেই ইন্টারনেটে উড়োজাহাজ নিয়ে ঘাটাঘাটি করতেন শামীম। একসময় টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে জমিয়ে ফেললেন বেশ কিছু অর্থ। তারপর সিদ্ধান্ত নিলেন, দেখতে যেমনই হোক, নিজের হাতে বানাবেন একটি উড়োজাহাজ।
শামীম বলেন, ছোটবেলা থেকেই উড়োজাহাজ তৈরি করার অনেক আগ্রহ ছিল আমার। প্রায় সময় কাগজের তৈরি উড়োজাহাজ দিয়ে খেলাধুলা করতাম। কিছুদিন আগে ইউটিউবে একজনের উড়োজাহাজ তৈরির ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেই নিজের একটি উড়োজাহাজ বানানোর। সেই চিন্তা থেকেই টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনি উড়োজাহাজ বানানোর বেশ কিছু প্রয়োজনীয় যন্ত্র। প্রায় আটমাস পর অবশেষে বানাতে পারি একটি উড়োজাহাজ।
প্রাথমিকভাবে ককশিট দিয়ে পরীক্ষামূলক একটি উড়োজাহাজ বানিয়েছেন জানিয়ে শামীম বলেন, তার তৈরি ‘অচিন পাখি’ নামের উড়োজাহাজটি এখনও পরীক্ষামূলক প্রকল্পে আছে। তুলনামূলক কম শক্তিশালী যন্ত্র নিয়ে বানানোয় ধাতব কোন বাহিক্য কাঠামো দেননি তিনি। তাই ওজনে হালকা করতে ব্যবহার করেছেন ককশিট।
তিনি বলেন, উড়োজাহাজটির দৈর্ঘ্য ৫৬ ইঞ্চি আর দু’পাশের ডানা লম্বায় প্রায় ৪০ ইঞ্চি। দেড় কেজি ওজনের বিমানটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ২টি প্রোপলার, ৪টি সার্ভো মোটর, রিসিভারসহ ২২০০ কেভির ২ টি মোটর। আর এগুলোর সাহায্যেই প্রাথমিকভাবে ৩০-৪০ ফুট উচ্চতায় উঠে ২ থেকে ৩ মিনিট আকাশে উড়তে পারে ‘অচিন পাখি’। আর সেটি নিয়ন্ত্রণ করা হয় রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে। পুরোপুরি কাজ শেষ হলে আকাশে উড়ার স্থায়ীত্ব আরও বাড়বে বলেও দাবি করেন শামীম।
শামীমের তৈরি বিমান দেখতে আসা হুমায়ূন আকাশসহ অনেকেই জানান, আমরা বাস্তবে কখনো কাছাকাছি উড়োজাহাজ দেখিনি। শুধু আকাশেই উড়তে দেখেছি। কিন্তু আমাদের গ্রামের শামীম রানার তৈরি উড়োজাহাজটি দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমাদের গ্রামের ছেলের এমন আবিষ্কার দেখে আমারা সত্যি আনন্দিত, আমরা চাই সরকার যেন শামীমকে সাহায্য সহযোগিতা করে, যাতে করে সে আরও ভালো কিছু করতে পারে।
শামীমের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকেই উড়োজাহাজ পছন্দ করতো শামীম। সেই পছন্দ থেকেই নিজের টিফিনের টাকা জমিয়ে একটি উড়োজাহাজ তৈরি করেছে সে। আর এই উড়োজাহাজ দেখতে প্রতিদিন প্রতিবেশীদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে।
তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ। ছেলের ইচ্ছে পূরণে তেমন কোন আর্থিক সাহায্য করতে পারি না। সরকার থেকে যদি তার গবেষণার সুযোগের বিষয়ে কোন সাহায্য সহযোগীতা করতো, তবে হয়তো আমার ছেলে আরও ভালো কিছু বানাতে পারতো।
ফুলবাড়ী জসিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, শামীম রানার এই উদ্ভাবনী কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই। শামীমকে দেখে অনেক ছাত্র ছাত্রী তাদের তাদের প্রতিভা বিকাশের প্রচেষ্টা চালাবে, সেই সঙ্গে শামীমকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতার আহ্বান জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ফুলবাড়ী উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা আজমল আবসার বলেন, স্কুলছাত্র শামীম তার মেধা আর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে, সামান্য কিছু যন্ত্র ব্যবহার করে যে উড়োজাহাজটি বানিয়েছে, সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। আমি জেনেছি এই উড়োজাহাজটি নিয়ে শামীম আরও গবেষণা করছে। সামনে হয়তো এটির আরও ভালো কোন রূপ দিতে পারবে সে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আমাদের আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে শামীম যখন যে ধরণের গবেষণা করতে চায়, সেই বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগীতা করা হবে।
Leave a Reply