আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিবিসি
প্যারিসের ঐতিহাসিক নটরডেম ক্যাথেড্রাল এবার নতুনরূপে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগামী শুক্রবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে ক্যাথেড্রালের পুনঃ উদ্বোধনের সূচনা করবেন।
২০১৯ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পাঁচ বছর পর, এই গথিক স্থাপত্যকীর্তি উদ্ধার, সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য এটি হবে এক অসাধারণ ভিজ্যুয়াল অভিজ্ঞতা।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তার স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁ এবং প্যারিসের আর্চবিশপ লরেন্ট উলরিখের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এই আয়োজনের চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ ডিসেম্বর। তখন ক্যাথেড্রালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এর পরদিন অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ক্যাথলিক প্রার্থনা।
নটরডেমের সংস্কারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউরো। সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। পুরোনো কাঠামোর জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে নতুন ছাদ কাঠামো। এই কাজগুলো দেখার পর প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ক্যাথেড্রালের ১,৩০০ কারিগর ও কর্মীদের ধন্যবাদ জানাবেন।
নটরডেমের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। তবে যারা সম্প্রতি এটি দেখেছেন তারা জানিয়েছেন, ক্যাথেড্রাল এখন আগের তুলনায় আরও উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ। এর নতুন রূপে দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিশ্বজুড়ে মানুষ টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছিল, কীভাবে আগুনের কমলা শিখা নটরডেমের ছাদ গ্রাস করছিল। শেষ পর্যায়ে, ক্যাথেড্রালের ১৯শ শতকের বিখ্যাত চূড়াটি ধসে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় সংস্কারকাজ চলছিল। আগুনের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধরা হয় কর্মীদের ফেলে যাওয়া সিগারেট বা বৈদ্যুতিক ত্রুটি।
১৫ ঘণ্টার চেষ্টায় ৬০০ দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আশঙ্কা করা হয়েছিল, উত্তর টাওয়ারের ঘণ্টাগুলো ধসে পড়লে পুরো কাঠামোই ভেঙে যেতে পারত। সৌভাগ্যবশত, মূল কাঠামো রক্ষা করা সম্ভব হয়।
ক্যাথেড্রালের ঐতিহাসিক চূড়ার পাশাপাশি কাঠের ছাদের কাঠামো (ফরেস্ট নামে পরিচিত), ট্রান্সেপ্ট এবং নাভের পাথরের ছাদের কিছু অংশ সেদিন আগুনে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
তবে ক্যাথেড্রালের সব রঙিন কাচের জানালা, অধিকাংশ ভাস্কর্য এবং শিল্পকর্ম, পবিত্র রেলিক ‘থ্রোনের মুকুট’ এবং ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্গান (মেরামতযোগ্য) সেদিন আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
পুনর্নির্মাণের পর ক্যাথেড্রালের অভ্যন্তরের শ্বেত পাথরের সৌন্দর্য এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। এই নতুন নোতরদাম তার অতীতের গ্লানি সরিয়ে এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পুনর্নির্মাণ কেবল এক ঐতিহাসিক স্থাপনার পুনর্জন্ম নয়, বরং এটি একটি জাতির ঐতিহ্য এবং ঐক্যের প্রতীক।
Leave a Reply