আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফরচুন
৩৩ বছর পেরিয়ে গেছে। স্টিভ জবস একসময় বলেছিলেন, ব্যক্তিগত কম্পিউটার হবে ‘মনের বাইসাইকেল’। বাইসাইকেল চালালে যেভাবে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি কম্পিউটারও মানুষের মানসিক ক্ষমতা বাড়িয়ে চিন্তা ও সমস্যার সমাধান দ্রুত করবে।
কিন্তু সময়ের সাথে সেই কম্পিউটারই এখন যেন এক বেগবান ট্রেনে রূপ নিয়েছে, যার সাথে যোগ হয়েছে স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো আধুনিক প্রযুক্তি।
আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে চার ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহার করে এবং প্রায় অর্ধেক মানুষ নিজেদের ডিভাইসে আসক্ত বলে দাবি করে। ২০২৩ সালের মে মাসে, বিশেষত তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল সতর্কতার কথা জানিয়েছিলেন।
এমন পরিসংখ্যান হয়তো আমাদের সবাইকে অবাক করে, তবে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই সবচেয়ে ভালোভাবে জানিয়ে দেয়, আজকের আধুনিক বিশ্বের অত্যাবশ্যকীয় ডিজিটাল ডিভাইস কতটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে আশাবাদের কারণও আছে। ডিভাইসে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আচরণগত অসামঞ্জস্য নতুন কোনো সমস্যা নয়। যেমন নগর বিশেষজ্ঞ ও দার্শনিক পল ভারিলিও বলেছিলেন, ‘ইতিহাসে ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রতিটি নতুন আবিষ্কার তার নিজস্ব ঝুঁকি বা সমস্যা নিয়ে আসে। যেমন, যখন মানুষ জাহাজ আবিষ্কার করল, তখন জাহাজডুবির ঝুঁকিও তৈরি হলো।’
আচরণগত অসামঞ্জস্য হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে আমাদের কাজ বা অভ্যাস, আমাদের নিজেদেরই অমঙ্গল বয়ে আনে। ইতিহাসে এর অনেক উদাহরণ দেখা গেছে। যেমন- প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে স্থূলতা বেড়েছে, কিংবা সহজে ঋণ পাওয়ার ফলে অতিরিক্ত খরচ করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে।
তবে, ধূমপানের ক্ষেত্রে আমেরিকায় ইতিবাচক পরিবর্তন আমাদের আশাবাদী হতে শেখায়। গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৪০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই পরিবর্তনের পেছনে ছিল জনসচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রণয়ন, সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।
১৯৬৪ সালে সার্জন জেনারেলের প্রতিবেদন ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে মানুষকে সচেতন করে এবং বড় ধরনের স্বাস্থ্য প্রচার শুরু হয়। পাবলিক স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং বিজ্ঞাপন নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর আইন মানুষের অভ্যাস পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। সময়ের সাথে সাথে ধূমপান সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, যা গণমাধ্যমের পরিবর্তিত চিত্র ও জনমতের পরিবর্তনে সহায়তা করেছে।
একইভাবে, ডিজিটাল আসক্তি মোকাবিলাতেও এমন প্রচেষ্টা কাজে দিতে পারে। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং গবেষণার ফলে মানুষ এখন বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারছে। এখন দরকার এমন প্রযুক্তির, যা সোশ্যাল মিডিয়ার মতো মনোযোগ দখল না করে বরং তা ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ডিজিটাল আসক্তি মোকাবিলার সবচেয়ে বড় সুবিধা
প্রযুক্তির ওপর মানুষের আসক্তি ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিই সাহায্য করতে পারে। ডিজিটাল আসক্তির ক্ষেত্রে, প্রযুক্তির মাধ্যমেই এমন পদ্ধতি তৈরি করা যেতে পারে, যা ব্যবহারকারীদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে উদুব্ধ করবে। যেমন, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কমানো বা অবচেতনভাবে স্ক্রলিং বন্ধ করা।
সহজভাবে, এটি এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করার কথা বলছে, যা প্রযুক্তি ব্যবহার করেই, এর ব্যবহারে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করবে। কোনো অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই আমরা এই ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারব।
এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে:
Leave a Reply