আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রয়টার্স, বিবিসি
স্বেচ্ছামৃত্যু সংক্রান্ত বিলের পক্ষে-বিপক্ষে আজ শুক্রবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিতর্কের পর এটি পাস হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তথা ভোট দেবেন আইনপ্রণেতারা।
বর্তমানে বিলটি নিয়ে ব্রিটেনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিলটি পাস হলে অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো ব্রিটেনেও অসুস্থ ব্যক্তির স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার পথে আর কোনো বাধা থাকবে না।
টার্মিনালি ইল অ্যাডাল্টস (এন্ড অব লাইফ) নামের এই বিল অনুযায়ী, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মানসিকভাবে সুস্থ তবে অসহনীয় ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং যার আর ছয় মাসও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই, এমন কেউ চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারবেন।
বিলটির সমর্থনকারীদের যুক্তি হলো- এটি অসুস্থ ব্যক্তির কাছে তার অসুস্থতার যন্ত্রণা থেকে বাঁচার এবং শান্তিতে মৃত্যুবরণে সহায়ক। সেইসঙ্গে এটি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কখন ও কীভাবে মারা যেতে চান, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা প্রদান করছে।
বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের পর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা কিম লিডবিটার বলেন, ‘এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার, আমরা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে কোনোটা বেছে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলছি না। বরং আমরা কথা বলছি মুমূর্ষু ব্যক্তি কীভাবে মারা যেতে চান, সেটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে।’
তবে বিলটির বিরোধিতাকারীরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, নিজেদের ভালোর জন্য নয়, বরং বিলটি পাস হলে অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হওয়ার ভয়ে তাদের জীবন শেষ করতে এক ধরনের চাপ অনুভব করতে পারেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভেতরে যখন বিলটি নিয়ে যুক্তিতর্ক চলছিল, তখন বাইরে নিজের বাবার ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়সি সাবেক নার্স ইমা হবস। তিনি জানান, তার বাবাকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
বিলটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে সমাজে যাদের প্রয়োজন নেই তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এটি হলো আপনার প্রিয়জনকে তার নিজের ইচ্ছা পূরণের সুযোগ করে দেওয়া।’
বেশিরভাগ দেশেই স্বেচ্ছামৃত্যু অবৈধ হলেও বেশ কয়েকটি দেশে এটি বৈধ। আর এমন দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যাও কম নয়, ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটিরও বেশি।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্পেন ও অস্ট্রিয়ায় ২০১৫ সালে স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দিয়ে আইন পাস করা হয়। ওই সময়ও যুক্তরাজ্যের এমপিরা এই ইস্যুতে ভোট দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি অঙ্গরাজ্যের পাশাপাশি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। ১৯৯৭ সালে ওরেগন অঙ্গরাজ্য নির্দিষ্ট কিছু রোগীর জন্য স্বেচ্ছামৃত্যুর আইন চালু করেছিল। ওরেগনে প্রাপ্তবয়স্ক যেসব রোগীর ছয় মাসের বেশি বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই তারা স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই দুজন চিকিৎসকের অনুমতি প্রয়োজন।
১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ২৭৪ জনকে প্রাণঘাতী ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। যাদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৭ শতাংশ বা দুই হাজাার ৮৪৭ জন। এছাড়াও অঙ্গরাজ্যটির দুই-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার রোগী গতবছর স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করেছিলেন।
কানাডা
কানাডায় মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছামৃত্যু আইন চালু করা হয়। প্রথমে এটি কেবল মুমূর্ষু রোগীদের জন্য প্রযোজ্য হলেও ২০২১ সালে এ আইনে সংশোধন আনা হয়। এর মধ্য দিয়ে যারা দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল রোগে ‘অসহ্য যন্ত্রণা’ ভোগ করছেন, তাদেরও স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
তথ্যমতে, কানাডায় প্রতি ১০০ মৃত্যুর মধ্যে চারটিই স্বেচ্ছামৃত্যুর ঘটনা। যেখানে ওরেগনে এ সংখ্যা প্রতি ১০০ মৃত্যুর মধ্যে মাত্র একটি।
ইউরোপ
ইউরোপের ছয়টি দেশে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। দেশগুলো হলো- সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, স্পেন ও অস্ট্রেলিয়া।
১৯৪২ সালে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ‘মৃত্যুর অধিকার’ নামে একটি বিল পাসের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা দেয় সুইজারল্যান্ড।
নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়ামে ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড
গত কয়েক বছরে অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় স্বেচ্ছামৃত্যুকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছামৃত্যুর বৈধতা দেওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডেও।
Leave a Reply