অনলাইন ডেস্ক:
স্কুলজীবনের স্মৃতি মনে করে দেখুন তো। গণিত পরীক্ষার আগের রাতে প্রচণ্ড চাপ আর উদ্বেগ অনুভব করতেন। গণিতের মৌলিক ধারণাগুলো বোঝার চেষ্টা করতেই হিমশিম খেয়ে যেতেন। শিক্ষাজীবনে অঙ্কের প্রতি এমন ভীতি ছিল অনেকেরই।
ছাত্রজীবনে আমরা অনেকেই কম-বেশি গণিতের প্রশ্ন সমাধানে সমস্যার মুখে পড়েছেন। কেউ কেউ এই যুদ্ধ জয় করে মানসিক বিকাশে এগিয়ে গেছেন, আবার কেউ কেউ মৌলিক ধারণাগুলো বুঝতেও কঠিন সংগ্রাম করেছেন এবং করছেন।
একজন শিক্ষার্থীর জন্য গণিতের ক্লাসে কঠিন সময় কাটানোর পেছনে কেবল উদ্বেগই কি দায়ী, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাগত প্রতিবন্ধকতা?
উত্তর জানতে একটু পেছনের দিকে ফিরে যেতে হবে। শৈশব থেকেই আমরা প্রত্যেকে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষা অর্জন করেছি বা করি। কেউ কেউ শুরু থেকেই পড়াশোনায় দক্ষতা অর্জন করে। অন্যদিকে অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও নিয়মিত অনুশীলনের পরেও কিছু শিক্ষার্থী গণিতে যথাযথ উন্নতি করতে পারে না। এর পেছনে কখনো কখনো দায়ী একটি বিশেষ রোগ। যার নাম ডিসক্যালকুলিয়া।
এই বিশেষ সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা গণিতের মূল নীতিগুলো বুঝতে পারে না। তাদের মধ্যে কারও কারও গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পরবর্তী পদক্ষেপ কী, সে ধারণা থাকতে পারে; কিন্তু এই পদক্ষেপগুলো কেন গ্রহণ করা হচ্ছে, তারা তা বুঝতে পারে না। এটি এক ধরনের নিউরো-কগনিটিভ সমস্যা।
গণিত-উদ্বেগ বা গণিত নিয়ে উদ্বেগ আর ডিসক্যালকুলিয়া যদি ভিন্ন জিনিস। যাদের গণিত-উদ্বেগ থাকে, তারা ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরও গণিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে ভয় পেয়ে যান। শুধু পরীক্ষাই নয়, গণিত শেখা, এমনকি গণিত সম্পর্কে চিন্তা করাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
এটিকে গণিতের একধরনের নেতিবাচক মানসিক প্রতিক্রিয়া হিসাবেও বর্ণনা করা হয়। গণিত-উদ্বেগযুক্ত শিশুরা প্রায়ই নিজস্ব ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, যদিও তারা গাণিতিক ধারণাগুলো ঠিকই বোঝে। এই ভীতি তাদের মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করে। শিশুদের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয় এবং প্রায়ই তাদের গণিত-সম্পর্কিত কোনো কিছুতে অংশ নিতে বাধা দেয়।
লক্ষণগুলো কিছুটা একই রকম মনে হলেও ডিসক্যালকুলিয়া এবং গণিতের উদ্বেগ—দুটি আলাদা সমস্যা। ডিসক্যালকুলিয়া একটি নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। সংখ্যা এবং গাণিতিক ধারণা বোঝা ও ব্যবহার করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এ রোগ।
ধরুন, আপনি একজন কাঠমিস্ত্রি। আপনার সরঞ্জামগুলো ত্রুটিপূর্ণ। আপনি যে কাজটি করছেন, সেটি ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতির কারণে সঠিকভাবে করতে পারছেন না। ফলে সঠিকভাবে কাঠামো তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। একইভাবে ডিসক্যালকুলিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য মৌলিক গাণিতিক ধারণাগুলো বোঝা এবং সেগুলো ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করা কঠিন হতে পারে।
অন্যদিকে গণিতের প্রতি উদ্বেগ মানে গণিত সংক্রান্ত ভীতি। চরম উদ্বেগ। এর কারণে গণিত শেখা, এমনকি গণিত সম্পর্কে চিন্তা করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এটা ভালোভাবে বুঝতে এমন একজন কাঠমিস্ত্রির কথা কল্পনা করুন। যে ভুল করার ভয়ে নতুন কিছু বানাতে দ্বিধা করছে। অর্থাৎ দক্ষতা থাকলেও সেটা কাজে লাগাতে পারছে না। পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ব্যর্থতার ভয়। ডিসক্যালকুলিয়া একটি শিখনজনিত সমস্যা।
Leave a Reply