মোঃ ফরিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী ইউনিয়নের মোঃ মেছের আলীর জীবন ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে একেবারে পাল্টে গেছে। ঢাকার আগারগাঁওয়ে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য অনুষ্ঠিত মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাতে মেছের আলী ওই মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে তার সেই সাহসিকতা তাকে চিরকাল স্মরণীয় করে রেখেছে এক দুঃখজনক পরিস্থিতিতে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে তার কপাল, চোখ, এবং মুখ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ডান চোখে গুলি লাগার ফলে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। কপালে ঢুকে থাকা তিনটি রাবার বুলেট এখনো তার শরীরে অবস্থান করছে। ঠোঁটের নিচে বুলেটের আঘাতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, যা তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে।
মেছের আলী জানিয়েছেন, “আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে গুলিতে আহত হয়েছি, এখন চোখ হারিয়ে বেঁচে আছি। চিকিৎসার জন্য যা কিছু ছিল, সবই শেষ হয়ে গেছে। আজকাল আর কিছু করার মতো অবস্থায় নেই।”
চিকিৎসার জন্য মেছের আলী ঢাকার ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং সেখানেই অপারেশনও করান। তবে, বুলেটগুলো অপসারণের জন্য বিশেষ ধরনের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, যার খরচ বহন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তার নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যদি দ্রুত এই বুলেটগুলো অপসারণ না করা যায়, তবে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। এই ধরনের চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
শুধু শারীরিক যন্ত্রণাই নয়, মেছের আলীর জীবনে আরও একটি বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে অর্থনৈতিক অনটন। ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে তার বাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার পর তিনি এখন শ্বশুরবাড়িতে আশ্রিত। একসময় রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ চালাতেন, কিন্তু তার শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে এখন রিকশাও চালাতে পারেন না। তিন সদস্যের পরিবারের জন্য প্রতিদিনের খাবার যোগানোও এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেছের আলী আরও বলেন, “আমার অবস্থার কারণে আমি রিকশা চালাতেও পারি না। বাড়ি হারিয়ে, চোখ হারিয়ে, আর্থিক সংকটের কারণে আমার জীবন এখন একদম অন্ধকারে চলে গেছে।”
স্থানীয়রা মেছের আলীর চিকিৎসার জন্য সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন। তারা জানান, “মেছের আলী একজন সংগ্রামী মানুষ। ছাত্র আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ছিল সাহসী ও অতুলনীয়, কিন্তু এখন তার জীবন সংগ্রাম করে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক দিক থেকে সমাজের হৃদয়বান মানুষদের সহযোগিতা খুবই জরুরি।”
মেছের আলীর চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধি, সমাজকর্মী এবং হৃদয়বান ব্যক্তিরা যদি এগিয়ে আসেন, তবে হয়তো এই সংগ্রামী মানুষটির জীবন আবারো নতুনভাবে শুরু হতে পারে। তার চিকিৎসার জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করা গেলে, হয়তো তিনি আবার জীবনের আলো দেখতে পাবেন।
Leave a Reply