কুড়িগ্রাম সংবাদ ডেস্ক: পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ (PCOD) একটি পরিচিত হরমোনজনিত সমস্যা যা আমাদের চারপাশের অনেক নারীর জীবনকে প্রভাবিত করছে। তবে এটি কোনো অজেয় রোগ নয়। সঠিক চিকিৎসা, জীবনধারার পরিবর্তন এবং মানসিক শক্তি দিয়ে এটি সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এই প্রতিবেদনটি তাদের জন্য, যারা এই সমস্যার কারণে ভীত, হাল ছেড়ে দিয়েছেন, কিংবা একাকিত্বে ভুগছেন। মনে রাখবেন, আপনি একা নন।
PCOD কী এবং কেন হয়?
PCOD এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে নারীদের ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট সিস্ট তৈরি হয়। এর ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং এটি প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি বোঝা না গেলেও বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি বিষয়কে এর কারণ বলে মনে করেন।
(১) জিনগত কারণ: যদি পরিবারের কারও মধ্যে এই রোগ থেকে থাকে, তবে তা উত্তরাধিকার সূত্রে আসার সম্ভাবনা থাকে।
(২) ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: যখন শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এটি ওভারিয়ানের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।
(৩) অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন: পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, যা ডিম্বাণু মুক্তির প্রক্রিয়া ব্যাহত করে।
(৪) জীবনধারা: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং মানসিক চাপও এই সমস্যার কারণ হতে পারে।
PCOD-এর লক্ষণ এবং প্রভাব
PCOD-এর লক্ষণগুলো সময়মতো চিহ্নিত করা খুবই জরুরি। এই সমস্যার প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
(১) মাসিক চক্র অনিয়মিত হওয়া বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
(২) মুখমণ্ডল, বুকে বা শরীরের অন্যান্য অংশে অতিরিক্ত লোম বৃদ্ধি।
(৩) ব্রণ বা ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া।
(৪) শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, বিশেষত পেটে।
(৫) মাথার চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া।
(৬) গর্ভধারণে জটিলতা।
(৭) ঘাড় বা বগলে কালো দাগ পড়া।
লক্ষণগুলোকে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। তবে আশার কথা হলো, এই রোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব।
PCOD মোকাবিলায় কী করবেন?
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুলুন: সুস্থ জীবনযাপন PCOD মোকাবিলার মূল চাবিকাঠি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করুন। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন, বিশেষ করে শাকসবজি, ফলমূল এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত মিষ্টি এড়িয়ে চলুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: PCOD চিকিৎসার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজনীয় হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী ওষুধ, যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমানোর জন্য মেটফর্মিন লিখে দিতে পারেন। চিকিৎসা পদ্ধতি আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।
মানসিক শক্তি বজায় রাখুন: PCOD শুধু শারীরিক নয়, মানসিক চ্যালেঞ্জও হতে পারে। বিষণ্ণতা, মেজাজ পরিবর্তন বা একাকিত্বে ভুগলে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের সমর্থন আপনাকে মানসিক শক্তি দেবে।
নিজেকে ভালোবাসুন: এই সমস্যার কারণে নিজের প্রতি বিরূপ ধারণা তৈরি করবেন না। এটি একটি স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সঠিক উপায়ে সমাধান করা যায়। আপনার শরীর এবং মনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।
আশার কথা:
আজকের দিনে অসংখ্য নারী PCOD-কে হারিয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে জেনে রাখুন যে এটি আপনার জীবনের একটি অধ্যায় মাত্র, পরাজয় নয়। সময়মতো চিকিৎসা এবং ইতিবাচক মানসিকতা আপনাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
কুড়িগ্রাম সংবাদ-এর বার্তা
PCOD নিয়ে লজ্জা বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি একটি সাধারণ সমস্যা, যা সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আপনি একা নন, অসংখ্য মানুষ এই যাত্রায় আপনার সঙ্গে আছেন। আপনার শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। সুস্থ জীবন আপনারই প্রাপ্য।
“ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন–কুড়িগ্রাম সংবাদ।”
Leave a Reply