ইকোনমিক ডেস্ক:
দেশের রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করছে। হাসিনার সরকারের পতনের পর গত তিন মাসে রেমিট্যান্স এবং রফতানি আয় উভয়ই বেড়েছে, এবং এর ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক রিজার্ভ আবারো ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। অক্টোবর মাস শেষে রিজার্ভ ছিল ১৯.৮৪ বিলিয়ন ডলার, যা ৯ সেপ্টেম্বর ছিল ১৯.৩৮ বিলিয়ন ডলার, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ১৩৭ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে রিজার্ভে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন— ৫ আগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এবং তারা সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। এর ফলে প্রতিমাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসাথে, রফতানি আয়ও বেড়েছে, যার ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি এবং অযৌক্তিক আমদানি বন্ধ হওয়ার ফলে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং এডিবি থেকেও ঋণ সহায়তা পাওয়া গেছে, যা আরো সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
রফতানি আয় বেড়েছে
অক্টোবর মাসে দেশের রফতানি আয় ২০.৬৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৪.১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় অনেক বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে রফতানি আয় বেড়ে ১৫.৭৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৪.২৪ বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে বড় অবদান এসেছে পোশাক খাত থেকে, যেখানে আয় বেড়ে ১২.৮১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। অক্টোবর মাসে পোশাক খাত ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের তুলনায় ২২.৮০% বেশি।
রফতানিকারকরা বলছেন— পোশাক খাতের উন্নতির জন্য নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি, যা বাংলাদেশে ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। তবে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী মাসগুলোতে সেক্টরের অস্থিরতা এবং ক্রেতাদের ধীর গতিতে অর্ডার দেওয়ার কারণে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
রেমিট্যান্সের প্রবাহ বেড়েছে
গত জুলাই মাসে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সময় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তবে নতুন সরকার গঠনের পর প্রবাসী বাংলাদেশিরা আবারো বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে শুরু করেন। ফলে, আগস্ট মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে ২২২ কোটি ডলারে (২.২২ বিলিয়ন) পৌঁছায়, সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার (২.৪০ বিলিয়ন), যা চার বছরের মধ্যে একক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল। অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স আবারো ২৪০ কোটি ডলার (২.৪০ বিলিয়ন) আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে— প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক।
রিজার্ভের ইতিবাচক অবস্থা
দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ বর্তমানে ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা প্রায় চার মাসের আমদানি দায় মেটানোর সমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুযায়ী, রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলার (বিপিএম-৬) এ দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে— গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করছে না, যার ফলে রিজার্ভ এখন স্থিতিশীল রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বর্তমানে ডলারের কোনো সংকট নেই। যে কেউ ব্যাংকে গিয়ে এলসি খুলতে পারবেন, এবং টাকা না পেলেও ডলার পাওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে, রফতানি আয় এবং রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি, ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতি এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী হচ্ছে, এবং রিজার্ভে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে।
Leave a Reply