ব্রহ্মপুত্রের অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে চায় ।রাজিবপুর উপজেলার পশ্চিমে অবস্থিত কোদালকাটি ইউনিয়নের আপামর জনসাধারণ। প্রতিদিনই এখানকার মানুষের জীবনজীবিকা নদী ভাঙনের ভয়াল থাবার নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর এই অব্যাহত ভাঙনে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ এলাকাবাসীর একের পর এক স্বপ্ন নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে। দিনের আলো ফুটতেই যেনো ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের আতঙ্ক নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান এখানকার মানুষ। কেবল শীতল বাতাসে ভেসে আসা তাদের কান্নার ধ্বনি শুনে সহানুভূতি জাগলেও উচ্চ পর্যায়ের কেউ কার্যকর উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বছরের পর বছর ধরে স্থায়ী বাঁধের আশায় বুক বেঁধে আছেন। নিজেদের সামান্য সম্বল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে আছেন প্রতিদিন। তাদের কান্না, তাদের আকুতি যেন কতই তুচ্ছ হয়ে উঠেছে! ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে যদি প্রভাবশালী বা কর্তাব্যক্তিদের বসতবাড়ি থাকত, তবে হয়তো এমন নির্মম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হতো না। কিন্ত এখানে বসবাসরত মানুষগুলো দুর্বল, অর্থনৈতিকভাবে অশক্ত, তাই তাদের কষ্টের গুরুত্ব যেন নেই।
একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা—এই দুইয়ের ফাঁদে আটকে পড়ে নদী পাড়ের মানুষগুলো আজ দিশেহারা। বারবার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাই ভাঙনের তীব্রতা এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছাড়া এই অঞ্চলকে রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, কতদিন এভাবে অপেক্ষা করতে হবে? আর কত ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল এবং হাটবাজার হারানোর পর ব্লকবাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? মানুষ জীবনের নিরাপত্তা চায়, স্থায়ী বাঁধের জন্য আহ্বান জানায়, যা তাদের সর্বস্ব রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল হবে।
একসময়ের সমৃদ্ধ এই এলাকা আজ নদী ভাঙনের ফলে একেবারে নিঃস্বপ্রায়। এখানকার মানুষ ব্রহ্মপুত্রের ভয়াবহ গর্জন শুনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ডাকাতের ভয়ে মানুষ সম্মিলিতভাবে রক্ষা পেতে পারে, কিন্তু প্রকৃতির এই প্রলয়কে ঠেকানোর মতো শক্তি কারো নেই।
কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান, দয়া করে অবশিষ্ট কোদালকাটির অংশ রক্ষার্থে স্থায়ী ব্লকবাঁধ নির্মাণ করে এই অঞ্চলের মানুষের কষ্ট দূর করুন। কেবল একটি কার্যকর বাঁধ নির্মাণই এই এলাকাবাসীর ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান এবং জীবনের শেষ সম্বল রক্ষা করতে পারে। তাদের এই আকুতি, তাদের বাঁচার আশা এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ের জন্য দায়িত্বশীল পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
লেখক: মোঃ আমিনুর রহমান (মাষ্টার), সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ
Leave a Reply